মিনহাজুল ইসলাম তুহিন, চবি প্রতিনিধি:
আর মাত্র কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ফেলার কথা ছিল তার। ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পর প্রিয় বাংলা বিভাগের সবকিছু আনন্দের স্মৃতিতে পরিণত হতে পারতো। কিন্তু স্মৃতির পাতায় আজ নিজেই নাম লিখিয়ে নিলেন। নাম আলাউদ্দীন হোসেন আলাওল। বাড়ী হাটহাজারী থানার ফতেপুর গ্রামে। বন্ধুরা তার হঠাৎ চলে যাওয়া বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। আলাউদ্দিনের বাবার চোখেও একরাশ স্বপ্ন ছিল; তা যে এভাবে ভেঙে যাবে কখনো কি ভেবেছিল? তাও আবার চেনাজানা মানুষের হাতে?
মূলত ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকেলে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্বদিকে পশ্চিম শহীদনগর এলাকা। সেখানেই রাস্তার পাশে চারতলা একটি বাড়িতে বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাসা ভাড়া নিতে হাজির হন তরুণীসহ চারজন। বাড়ির নিচতলায় তত্ত্বাবধায়ক হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন তারা। বাড়ির তৃতীয় তলার খালি ফ্ল্যাটটি দেখতে চান। বাসা দেখে পছন্দ হওয়ার কথাও জানান। চারজনের পরিচয় দেন এভাবে; দুজন স্বামী-স্ত্রী, বাকি দুজন বন্ধু। থাকবেন স্বামী-স্ত্রী। এর আগের দিন বিকেলে ঐ চারজনের একজন (নিহত আলাউদ্দিন নয়) ফ্ল্যাট খালি আছে কিনা, তা জানতে আসেন। তবে বাসার ভেতরে ঢোকেননি। এরপর ভাড়া নিতে আসা ঐ চারজনের মধ্যে একজন জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তারা পাশের এলাকা হামজারবাগের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে কিছু সমস্যার কারণে বাসা পরিবর্তন করছেন। এ কারণে আজই এ বাসায় উঠতে চান। মালামাল পরে আনবেন বলেও জানান। সাড়ে সাত হাজার টাকা ভাড়া শুনে সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান। এরপর এদের মধ্যে একজন বাসা পরিষ্কার করার জন্য বাড়ির কেয়ারটেকারের স্ত্রী হাসিনা আক্তার থেকে একটা বালতি নিয়ে কিছুক্ষণ পর তা ফেরত দিয়ে বেরিয়ে যান।
লোকটি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে স্বামী-স্ত্রী পাশের দোকান থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। আনুমানিক রাত আটটার দিকে হাসিনা আক্তার নিচতলা থেকে তৃতীয় তলায় এসে দেখেন, ফ্ল্যাটটির দরজা খোলা। কোনো সাড়া শব্দও নেই। কোথাও কাউকে না দেখে বাসার ভেতরে ঢোকেন। এরপর বাসার টয়লেটের ভেতর হাত-পা বাঁধা একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
এদিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুহসীনের কাছে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রতিক্ষণ ডট কমকে বলেন, ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুন হওয়া যুবক ও খুনিরা পূর্বপরিচিত। প্রেমঘটিত কারণে হত্যা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
নিহত আলাউদ্দীনের বন্ধু বাংলা নিউজের চবি প্রতিনিধি প্রতিক্ষণকে জানান, প্রেমসংক্রান্ত বিষয়ের কারণে হত্যা হতে পারে। যেহেতু বিষয়টি তদন্ত চলছে তাই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। বন্ধু সাদেক হোসেন জানান, কলেজে পড়ার সময় এক মেয়ের সঙ্গে আলাউদ্দিনের সম্পর্ক ছিল। পরে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। আবার সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয়। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে আবারও সম্পর্ক গড়ে উঠে।
তবে প্রেমঘটিত হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক আলাউদ্দীনকে হত্যা করা হয়েছে এটাই সত্য। ঠিক কী কারণে কে বা কারা আলাউদ্দীনকে হত্যা করলো তা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন। তবে বন্ধুদের মাঝে আর ফিরে আসবে না তাদের প্রিয় মুখটি। বাবা-মায়ের কাছে অধরায় থেকে গেল আলাউদ্দিন তুচ্ছ প্রেমের বলি হয়ে?